প্রকাশের তারিখঃ আগস্ট ২, ২০২৪, ৭:০৭ অপরাহ্ণ
সন্ত্রাসীদের ওপর আইনের প্রয়োগ ঘটবে, নিরপরাধ শিক্ষার্থীদের নয়

আইনের প্রয়োগ ঘটবে শুধু সন্ত্রাসীদের ওপর, নিরপরাধ শিক্ষার্থীদের ওপর নয় বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত। গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সমসাময়িক বিষয়ে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সাম্প্রতিক কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে প্রতিমন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চায়, আইনের প্রয়োগ ঘটবে শুধু সন্ত্রাসীদের ওপর। সুনির্দিষ্ট প্রমাণ সাপেক্ষে ফৌজদারি অপরাধের সঙ্গে যাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে, তাদের ওপর আইনের প্রয়োগ ঘটবে, তাদের গ্রেপ্তার করা হবে।
কোনো সাধারণ শিক্ষার্থী কোনোভাবে যেন হয়রানির শিকার না হয়, এটি আমরা দ্ব্যর্থহীনভাবে বলেছি। পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে আলাপ হয়েছে, যেসব শিক্ষার্থী আন্দোলনে ছিল, স্লোগান দিয়েছে, পানি বিতরণ করেছে, তাদেরও যেন কোনোভাবে হয়রানি করা না হয়, তাদের পরিবারের কোনো সদস্য যাতে কোনোভাবে নাজেহাল না হয়। কারণ সব শিক্ষার্থী এবং আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত শিক্ষার্থীদের আবেগ-অনুভূতিকে আমরা শ্রদ্ধা করি। এর সঙ্গে আমাদের পুরো সমবেদনা ও সমর্থন আছে।
কিন্তু তাদের আবেগকে পুঁজি করে যারা ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে, তারা সাধারণ শিক্ষার্থী নয়। আমরা নিশ্চিত করতে চাই, শিক্ষার্থী যারা তাদের আবেগ নিয়ে আন্দোলনে ছিল, কোনোভাবে যাতে একজন শিক্ষার্থীও নাজেহাল না হয় আর সন্ত্রাসীদের আমরা আইনের আওতায় নিয়ে আসব।’ব্রিফিংয়ে তথ্য প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, ‘কোটা আন্দোলন ঘিরে বিগত দিনগুলোতে যে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে, এ বিষয়গুলো সরকারের জন্য, দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য, বিশেষ করে যারা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার, সবার জন্য খুবই দুর্ভাগ্যজনক এবং খুবই দুঃখের। সরকারের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী নিজে এবং আমি বহুবার গভীরভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছি, প্রতিটি হতাহতের ঘটনার জন্য নিন্দা জানিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী ১৬ জুলাই জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ঘোষণা দিয়েছিলেন একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করবেন এবং এটি গঠিত হয়েছে। স্বাধীন বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের মাধ্যমে প্রতিটি হতাহতের ঘটনা তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা হবে। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনে আমরা বিদেশি এক্সপার্টেরও সহায়তা নেব। এখানে আমরা পুরোপুরি স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতে থাকতে চাই।’তিনি বলেন, ‘হতাহতের ঘটনায় যাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, যাঁরা পরিবারের সদস্য হারিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী তাঁদের অনেকের সঙ্গে গণভবনে দেখা করেছেন, কথা বলেছেন।
সে সময় আমিও উপস্থিত ছিলাম। সেখানে আবু সাঈদের পরিবারের সদস্যরাও ছিল। তাদের সঙ্গে আমারও আলাদাভাবে কথা হয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে, আমরা কোনো কিছু চাই না, আমরা বিচার চাই।’প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি মৃত্যুর জন্য, প্রতিটি হতাহতের ঘটনার জন্য সরকার এবং বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত, দেশের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। হয়তো কোনো একটি তৃতীয় পক্ষ এটির সুবিধা নিচ্ছে। এসব ঘটনার ক্ষতিগ্রস্তরা যেমন বিচার চান, সরকারও একইভাবে বিচার চায়।তিনি বলেন, শিক্ষার্থী আন্দোলনকারী যারা, তাদের যে উদ্দেশ্য ছিল, তাদের যে দাবি ছিল, তার মধ্যে তৃতীয় পক্ষ ঢুকে অন্য উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য যে ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে, চোখের সামনে সব প্রমাণ আছে। যারা নরসিংদীতে জেল ভেঙে কয়েদিদের বের করে নিয়ে এসেছে, উচ্চ পর্যায়ের জঙ্গিদের বের করে নিয়ে এসেছে, জেলের স্টাফদের বন্দি করে রেখেছিল, যত ধরনের অস্ত্র লুট করেছিল, এগুলো শিক্ষার্থীদের কাজ হতে পারে না। মেট্রো রেল, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ যার উপকারভোগী, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর, যে অধিদপ্তর দেশে দুর্যোগকালে সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করে, বিটিভি, সেতু ভবন, এক্সপ্রেসওয়ের টোল প্লাজাসহ প্রতিটি সরকারি স্থাপনা, যেগুলো সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করে—এগুলোতে যারা ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে, এটি শিক্ষার্থীদের কাজ হতে পারে না। এটি করেছে সেই তৃতীয় পক্ষ সন্ত্রাসীরা এবং তারা এমন অবস্থা সৃষ্টির চেষ্টা করেছে, যেন এখানে হতাহতের ঘটনা ঘটে। তারা শিক্ষার্থীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে, শিক্ষার্থীদের আবেগ-অনুভূতিকে অপব্যবহার করে তারা এ কাজগুলো করেছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী তথা পুলিশ, র্যাব, বিজিবি এবং অন্য যারা আছে, কাউকেই গুলি করার কোনো অনুমতি ছিল না। সংবিধান এবং আইনের অধীনে তাদের কাজ করতে হয়েছে। তাই বলে আমি এটিও অস্বীকার করছি না, ক্ষেত্রবিশেষে কেউ কেউ মাঠে আইন ভাঙেনি। আমরা এটি তদন্ত করে তাদেরও বিচারের আওতায় আনব।’
তথ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার আন্দোলনের শুরু থেকেই শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা দিয়েছে এবং তাদের আলাদা রেখেছে। সরকার কখনোই তাদের দোষারোপ করেনি। আমাদের সব বক্তব্যে যেগুলোকে আমরা দোষ দিয়েছি, তার একটিও শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে নয়, প্রতিটিই সন্ত্রাসীদের উদ্দেশে। আমাদের সব আইনের প্রয়োগ একটিও শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে নয়। প্রতিটি সন্ত্রাসীদের উদ্দেশে।’
তিনি আরো যোগ করেন, যারা সহিংসতায় মারা গেছে, তারা সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। সব মৃত্যুর বিচার এ দেশ করবে, এ দেশের সরকার করবে এবং স্বাধীন বিচার বিভাগীয় কমিশনের মাধ্যমে করবে। প্রয়োজনে স্বচ্ছতার স্বার্থে বিদেশি অভিজ্ঞ ও পেশাদারদের সম্পৃক্ত করা হবে।
Copyright © 2025 Daily Labbaik. All rights reserved. | Developed by UNIK BD